শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৫
মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০১৫
বাস্তবের সাথে দ্বন্দ্ব
আমাদের পাড়ায় বহু পুরাতন
একটা রাজবাড়ী ছিল । শুনতাম ওটা ছিল প্রাচীন এক রাজার নাচ ঘর । বাড়িটার সামনে ছিল
একটা সুন্দর বাঁধানো পুকুর । ছোটবেলায় ঐ পুকুরে দেখতাম অনেকগুলো রাজহাঁস খেলা করতে
। আমাদের কাছে সেই রাজহাঁসগুলো ছিল প্রতিদিনের দর্শনীয় বিষয় । রাজহাঁস গুলোর সুন্দর
বিপুলাকায় চেহারা আমাদের বিস্ময়ের উদ্রেক করত কারন আর কোথাও ওরকম হাঁস দেখতে পেতাম
না । শুধুমাত্র রাজবাড়ীতেই ঐরকম হাঁস দেখতে পেতাম বলে এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে
গিয়েছিল যে রাজার হাঁস বলেই হয়ত এদের এমন সুন্দর চেহারা, এমন বিপুল আকৃতি । কিন্তু
এতদিনের বদ্ধমুল ধারণার সঙ্গে স্কুলের বাংলা ব্যাকরন সারের শেখানো রাজহাঁসের
ব্যাসবাক্য আমাকে প্রচণ্ড দ্বন্দ্বে ফেলে দিল । স্যার বললেন রাজহাঁস হ’ল হাঁসের
রাজা । খুব ছোট বেলা থেকে জন্মানো বিশ্বাসের সঙ্গে বেমানান একটা সম্পূর্ণ বিপরীত
জিনিসকে মেনে নিতে কিছুতেই মন চাইছিল না । কিন্তু স্যারের প্রতি বিশ্বাস না রাখা
মানে তাঁকে অসম্মান করার সামিল । অতএব, খাতায় কলমে ‘হাঁসের রাজা’ আমার মনে আজও
‘রাজার হাঁস’ হয়েই আছে ।
এ রকম আরও বাস্তবলব্ধ
বিশ্বাস আর ছাপার অক্ষরে লেখা তথ্যের ফারাক একটা মানসিক বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে সেই
ছোট্ট বেলা থেকে । আমাদের গ্রামে ছোট বেলায় শহরের পিচঢালা রাস্তা বলতে যা বোঝায়,
সে রকম কোন পাকা রাস্তা ছিলনা । তার পর একদিন শুনলাম আমাদের গ্রামে রাজপথ তৈরি হবে
। মাস দুয়েকের মধ্যে হয়েও গেল । আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে বিকেল হলে একরাশ কৌতূহল
নিয়ে দেখে আসতাম রাজপথ তৈরির ক্রিয়া কৌশল আর মনে মনে দিন গুনতাম কবে রাজপথ তৈরি
শেষ হবে । তারপর একদিন রাজপথ চালু হল । গ্রামের সবার মধ্যে ইতিমধ্যে রাজপথ তৈরির
সুবাদে জন্মে গিয়েছে কেমন যেন হাল্কা শহুরে মানসিকতা । ব্যতিক্রম শুধু আমাদের
পাড়ার বিনুদা’র । বিনুদার গোরুর গাড়ী চালিয়ে সংসার চলে । জানা গেল রাজপথ দিয়ে গোরুর
গাড়ী, ঠেলা গাড়ী এসব চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে । শহর থেকে মোটর গাড়ী আসছে রাজপথ
দিয়ে । মোটর গাড়ীর শব্দে আমাদের গ্রামে শহুরে মেজাজ । কেবলমাত্র বিনুদা’কেই দেখতাম
রাজপথ হওয়ার পর থেকে সব সময় মন খারাপ করে থাকতে । একদিন সোৎসাহে জিজ্ঞেসই করে
ফেললাম “কিগো বিনুদা, রাজপথে তোমার গোরুর গাড়ী চলতে দিচ্ছে না ব’লেই কি তোমার মন
খারাপ ? অন্য রাস্তায় তো তোমার গাড়ী চলছেই ।“ বিনুদা অভিমানে জবাব দিয়েছিল “রাজার রাস্তায় কি গোরুর
গাড়ী মানায় ?” চট করে সদ্য শেখা ‘রাজপথ’-এর ব্যাসবাক্য মনে পড়ে গেল । শিখেছি ‘রাজপথ’ মানে পথের রাজা । কিন্তু
বিনুদার কথাটা শুনে মনে হ’ল সত্যিই তো রাজপথ নিশ্চয়ই রাজার পথ – তাই ঐ পথে কিছু
কিছু যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, পথের রাজা হলে নিশ্চিত সব ধরণের যান নির্দ্বিধায়
চলাচলের ছাড়পত্র পেত – বিনুদার মত কাউকে এভাবে দুঃখ পেতে হ’ত না । আবার দ্বন্দ্ব তৈরি
হ’ল মনে ।
দ্বন্দ্বটা আরও ঘনীভূত হতে
থাকল যখন ‘রাজবাড়ী’ আর ‘রাজপথ’ মাথার মধ্যে রীতিমত কুস্তি করতে থাকে । রাজপথ যদি
পথের রাজা হয়, তাহলে বিশাল বিশাল অট্টালিকা মাত্রেই কেন রাজবাড়ী নয় ? অথচ রাজবাড়ী
বলতে এককথায় আমরা রাজার বাড়ীকেই বুঝে নিই । এই দ্বন্দ্ব নিয়েই আমি এবং আমার মত
অনেকেই, বোধহয় সকলকেই চলতে হয় । কোনটা ঠিক সেটা যদি আমাদের বাস্তবের উপলব্ধি থেকে
ঠিক করে নেওয়া যেত, তাহলে এই টানাপড়েনে ভুগতে হত না আমাদের । ‘নেই মামার চেয়ে কানা
মামা ভাল’ না ‘দুষ্ট গোরু র চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল’ কোনটা আদতে ঠিক তা বাস্তব নির্দিষ্ট
করে দেয় । আগে দ্ব্যর্থবোধ দূর করা প্রয়োজন । কবিতায় বহুমুখী ভাবনা চিন্তার অবকাশ থাকে ।
বাস্তব কবিতা নয় । যে বাস্তবের পটভূমি আমাদের জীবনের বিচরণক্ষেত্র সেখানে
নৈমিত্তিক অভিজ্ঞতালব্ধ সত্যকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ । ‘রাজনীতি’ ‘নীতির রাজা’
নাকি ‘রাজার নীতি’ সে নিয়ে বই-এর পাতায় যাই লেখা থাক না কেন, বাস্তবের অভিজ্ঞতা
বলছে রাজনীতি আসলে ‘রাজার নীতি’ই, ‘নীতির রাজা’ কখনোই নয় ।
অ.না.ক.
১২/০৮/২০১৫
শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০১৫
বুধবার, ২২ জুলাই, ২০১৫
শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০১৫
শুক্রবার, ১২ জুন, ২০১৫
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
মুখ চাপা সত্য
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?
-
এক লাইনের কাব্যঃ অ.না.ক. ২১/০৩/২০১৭ এক লাইনেও কাব্য হয় দু'লাইনে ছন্দময় ।