বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩

রাজনীতিতে সাহিত্য

 

রাজনীতিতে সাহিত্য

অমরনাথ কর্মকার

২৫ বৈশাখ 'লে গেল ছুটি 'লে বাড়িতেই ছিলাম সারাদিন। পাড়ার রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান তীব্র দাবদাহের কারনে  দিন পরিবর্তন করেছে।  অতএব, টিভি ভরসা। কিন্তু সেখানে রবীন্দ্রনাথকে পাওয়া গেল অন্যভাবে। সারাটাদিন চলল রাজনীতিতে রবীন্দ্রায়নের খবর। আবার  শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট ম্যাকবেথ চরিত্র নিয়েও চলল দড়ি টানাটানি। অগত্যা বিস্মৃতপ্রায় কলকাতা দূরদর্শণ ভরসা দিল। সেখান থেকেই দেখা গেল জোড়াসাঁকো, শান্তিনিকেতনের অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের চ্যানেল খুলে লাইভ শিলাইদহ উপভোগ করলাম। ছোটবেলার ২৫ বৈশাখে রবীন্দ্রস্মরণের নস্টালজিয়ায় ডুব দিয়ে কিছুটা শীতল হলাম বটে, কিন্তু একটা দুশ্চিন্তা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না। যেভাবে সবকিছু ছাপিয়ে রাজনীতির তরজা সর্বত্রগ্রামি হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে বাঙালীর একমাত্র সংস্কৃতি কি শুধুমাত্র রাজনীতি 'তে চলেছে? আজ সারাদিন রবীন্দ্রজয়ন্তীকে উদ্দেশ্য 'রে যেভাবে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে রাজনৈতিক লোফালুফি শুরু ' তাতে কাদের রাজনৈতিক সুবিধা ' তার চেয়েও বড় প্রশ্ন রবীন্দ্রনাথ বিদ্যাসাগর  এঁরা কি রাজনীতির শীকার হচ্ছেন! না কি রাজনীতিতে সাহিত্যিক কিংবা সাহিত্য নতুন পথের দিশারি ? আবার অনেক সাহিত্যিক, কবি, নাট্যকার, শিল্পীকে ইদানিং প্রত্যক্ষরাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতে দেখা যাচ্ছে। 

অ্যারিস্টটল বলেছিলেন 'যে কোন মানুষ চারিত্রিকভাবে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক প্রানী' ব্রেটল্ট ব্রেখট বলেছিলেন 'অশিক্ষিতদের মধ্যে নিকৃষ্ট হচ্ছে সে, যে রাজনৈতিকভাবে অশিক্ষিত। কারন সে বলে না, শোনে না, রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে না। জীবনের মূল্য সে জানে না... ' রাজনীতি যেহেতু জীবনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে এবং জীবন নিয়েই সাহিত্যিকদের কারবার, অতএব, অবধারিতভাবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তি সাহিত্যিকদের স্বাভাবিক প্রবণতা। প্লেটো, অ্যারিস্টটল থেকে শুরু 'রে অ্যাঞ্জেলী-মার্গারিট অ্যাটউড-এর মত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত পৃথিবীর বহু বিখ্যাত সাহিত্যিক রয়েছেন।

মনে হতেই পারে, রাজনীতি আর সাহিত্যকে একপাত্রে রাখা ঠিক নয়। কারন সাহিত্য নান্দনিক, কিন্তু রাজনীতি নানান কৌশল আর জটিলতায় পূর্ণ। এই যুক্তি মেনে নিলে রাজনীতি আর সাহিত্যকে পৃথক করা গেলেও এই দুটিকে পরস্পর সম্পর্কহীন 'রে তোলা অসম্ভব। কারন এই দুটি বিষয়ই নিবিড়ভাবে জীবনের সাথে সম্পর্কিত। একদা রাজসভায় কবি-সাহিত্যিক নিযুক্ত থাকতেন যাঁদের কীর্তি মোটেই কম নয়, বরং বলা যায় সাহিত্যে বহুকালই রাজার পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনীয়তা ছিল, পুঁজির যোগ না থাকলে সাহিত্যের অবকাশ ঘটে না, বাক্যস্ফূর্তি অবিরাম হয় নাএটি মধ্যযুগে যেমন সত্য ছিল, আজও সমান সত্য হয়ে আছে।রাজনীতি প্রভাবিত করে জীবনকে এবং ব্যক্তিজীবনেও সেই প্রভাব আলোড়ন সৃষ্টি করে। রাজনীতি ব্যক্তিজীবনকে কখনো সমৃদ্ধ করে, আবার সঙ্কটাপন্নও করে কখনো।

একদা রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন, জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদেনাইটত্যাগ করেছিলেন। নজরুল 'ধুমকেতু' দিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। এছাড়াও সেই হিসাবে এই সাহিত্যিকদের উদ্দেশ্য মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর মত - মানুষের উন্নয়ন। সেই হিসাবে  রাজনীতি আর সাহিত্যিক মিলেমিশে একাকার।

বস্তুগত কল্যাণ বা উন্নয়ন রাজনীতির মূল লক্ষ্য। অপরদিকে মানুষের মনোজগতের কল্যাণ বা উন্নয়ন সাহিত্যের মূল লক্ষ্য। এই দিক বিবেচনায় সাহিত্য রাজনীতির ক্ষেত্র ভিন্ন। মানুষের জীবনে জাগতিক মনোজাগতিক উভয় ক্ষেত্রেই উৎকর্ষ সাধন প্রয়োজন। কুরাজনীতি যখন সাধারণ মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তখন সাহিত্য আপামর সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করার শিক্ষা দেয়। অবশ্য সাহিত্য ব্যাপারে সব সময় যে সফল হয় তাও নয়।  তখন সাহিত্যের ওপর আস্থা হারায় মানুষ। মানুষের প্রতি সাহিত্যের দায় অনেক। বর্তমান সাহিত্যের একটি বড় অংশ সেই দায় মাথায় নেওয়ার কথা ভাবে না,  অন্তত রাজনীতির খবরে ঢাকা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তা সহজে প্রতিফলিত হয় না। ফলে নান্দনিকতার চর্চা কখনো কখনো গৌণ হতে দেখা যাচ্ছে। তাই সাহিত্যে এখন গ্রামের সৌন্দর্যের বদলে গ্রামের মানুষের দৈন্যের চিত্র ফুটে ওঠে। প্রকৃতির অনাবিল রূপের বদলে পরিবেশ দূষণের চিত্র ফুটে ওঠে। ফুল-পাখি-প্রজাপতির বদলে জীব জগতের ইকোসিস্টেম রক্ষার আকুতি ফুটে ওঠে। এভাবেই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবতার ভিত্তিতে বদলে যায় সাহিত্য এবং সেই সাহিত্য দর্পণের মত চলমান রাজনীতি রাজনীতির অবক্ষয়কে প্রতিফলিত করে তাই মানবকল্যাণের স্বার্থেই চলমান রাজনীতির সাথে সাহিত্যের ইতিবাচক সম্পর্ক জরুরি। আজকাল রাজনৈতিক নেতাদের মুখে  অহরহ কবি-সাহিত্যিকদের নাম বা তাঁদের সৃষ্ট চরিত্রের নাম কিংবা তাঁদের লেখনির উদ্ধৃতি যে ভাবে উঠে আসছে তাতেই প্রমাণিত হচ্ছে রাজনীতির সঙ্গে সাহিত্যের বাঁধন কতটা শক্ত। এর ইতিবাচক প্রভাব সমাজ বা ব্যক্তিগত জীবনে কতটা সুফল দেয় এখন সেটাই দেখার।

বুধবার, ২২ মার্চ, ২০২৩

বাংলা ভাষার অস্তিত্ব সঙ্কট - একটি নিবন্ধ

 

বাংলা ভাষার অস্তিত্ব সঙ্কট

অমরনাথ কর্মকার ২৩/০৩/২০২৩

কোন শিক্ষাকে স্থায়ী করিতে হইলে, গভীর করিতে হইলে, ব্যাপক করিতে হইলে তাহাকে চির পরিচিত মাতৃভাষায় বিগলিত করিয়া দিতে হয়। যে ভাষা দেশের সর্বত্র সমীরিত অন্তঃপুরের  অসূর্যস্পশ্য কক্ষেও যাহার নিষেধ নাই, যাহাতে সমস্ত জাতির মানসিক নিশ্বাস প্রশ্বাস নিষ্পন্ন হইতেছে, শিক্ষাকে সেই ভাষার মধ্যে মিশ্রিত করিলে তবে সে সমস্ত জাতির রক্তকে বিশুদ্ধ করিতে পারে, সমস্ত জাতির জীবন ক্রিয়ার সহিত তাহার যোগ সাধন হয়।“ রবীন্দ্রনাথ আরোও বলেছিলেন  “মানুষ যে কেবল নিজের মধ্যে আছে তা নয়, সকলে তাহাকে যা জানে সে জানার মধ্যেও সে অনেকখানি আছে।তাইআপনাকে জানোএই কথাটা শেষ কথা নয়, ‘আপনাকে জানাওএটাও খুব বড়ো কথা।খুবই পরিতাপের বিষয় বাংলা জানার আগ্রহই বাঙালীদের মধ্যে ক্রমশ ক্ষীণ হতে শুরু করেছে আর তকে জানানোর কথা ভাবাটাই অবান্তর।

মাত্রকয়েকদিন আগেই ঘটা ক’রে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হ’ল আর এই দিনটি উযযাপনের মূলে বাংলা ভাষার জন্য রক্তাক্ত সংগ্রামের যে নেপথ্য ইতিহাস আছে তা সকলেরই জানা।  মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের সমান। একুশ শতকে দাঁড়িয়ে এই আপ্তবাক্য বাঙালী অধ্যুষিত পশ্চিমবাংলায়, বিশেষত কলকাতা বা শহরাঞ্চলে কতটা মিথ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে তা বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে তাকালেই স্পষ্ট হয়ে যায়। ভারতে অর্থনৈতিক উদারীকরণের রমরমা, বহুজাতিক সংস্থার দাপট এ সবের সঙ্গে সহাবস্থানের প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবেই কদর বেড়েছে ইংরেজির। ফলশ্রুতি, বেসরকারী মালিকানায় ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ফুলে ফেঁপে উঠেছে৷ আর এরই পরিনামে জমি হারাচ্ছে বাংলা ভাষায় পঠন পাঠন। শুধু পশ্চিমবাংলার কথা যদি বিবেচনা করা যায় তাহলে দেখা যাবে ইতিমধ্যেই এ রাজ্যের মানুষের মুখের ভাষার সঙ্কট শুরু হয়ে গেছে। একদিকে বেসরকারী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সংখ্যা লাফিয়ে বৃদ্ধি এবং সেই সমস্ত স্কুলে ভর্তি হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি, অন্যদিকে বাংলা মাধ্যম স্কুলে ক্রমহ্রাসমান ছাত্র সংখ্যা এই দুই অসম প্রতিযোগিতায় বাংলা মাধ্যম স্কুল ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে, সেই সঙ্গে ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে বাংলা ভাষার অস্তিত্বের সঙ্কট। সরকারী বা সরকার পোষিত বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলির পরিকাঠামোগত অবনমন, যেমন  স্কুলগুলিতে ছাত্র সংখ্যার অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যার অপ্রতুলতা, প্রশাসনিক অব্যবস্থা প্রভৃতি কারনে অভিভাবকরা এই সমস্ত বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলির প্রতি বিশ্বাস হারাচ্ছেন এবং বিকল্প হিসাবে সন্তানের ভবিষ্যৎ সুন্দর করার লক্ষ্যে ভরসা রাখছেন বেসরকারী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলির প্রতি। তাছাড়া সাম্প্রতিক কালে এ রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ যে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি ধরা পড়েছে, তাতে  সরকারী বা সরকার পোষিত বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলির প্রতি মানুষের আস্থা বা বিশ্বাস তলানিতে ঠেকেছে। 

সভ্যতা সংস্কৃতির ইতিহাস বলে, মাতৃভাষার  গুরুত্ব যাদের কাছে যত বেশি, তারা উন্নয়নের ধারায় তত অগ্রগামী। চীন, জাপান, রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশের উদাহরণ লক্ষ্য করলেই বক্তব্যটি স্পষ্ট হয়। সেসব দেশ নিজেদেরকে জ্ঞানচর্চার মাধ্যমেই উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে গেছে। নিজের মাতৃভাষাকে অধিক গুরুত্ব দানের মধ্যে রয়েছে স্বাজাত্যপ্রীতি।

শিক্ষা উন্নয়নে মাতৃভাষা বাংলাকে যেভাবে মূল্যায়ন করা দরকার, আমরা, বাঙালীরা, তা থেকে ক্রমশ দূরে সরে আসছি। আমরা সুযোগ পেলেই বাংলার, বাঙালীর অতীত গৌরবময় ইতিহাস নিয়ে গর্ব করি অথচ নিজের বাঙালীয়ানা বিসর্জন দিয়ে নিজের মাতৃভাষাকে অন্তর্জলি যাত্রায় পাঠিয়ে মুখে ইংরেজি,বা হিন্দির ফুলঝুরি ছুটিয়ে নিজেদেরকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত প্রমাণ করার চেষ্টা করি – স্বাজাত্যবোধ উধাও হয়ে যায়। বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে অন্যদের সাথে টিকে থাকতে হলে ইংরেজি, হিন্দি বা অন্যান্য বিদেশি ভাষার ব্যবহার অব্শ্যই মাথায় রাখতে হবে। কাজ চালানোর ভাষা হিসাবে সেই সমস্ত ভাষা শেখায় আপত্তি নেই, কিন্তু একজন বাঙালীর প্রাণের ভাষা তো বাংলা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। সুতরাং সেই ভাষায় শিক্ষাগ্রহণ যতটা প্রাণ স্পর্শ করে অন্য ভাষায় তা কখনোই সম্ভব নয়। বরং মাতৃভাষাকে কেন্দ্রে রেখে বিভিন্ন ভাষার একটি আবহ তৈরি করাই কাম্য। যার মাধ্যমে বিশ্বের নানা দেশের জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইতিহাস, ঐতিহ্য গ্রহণ করা এবং সেসবকে নিজের দেশ সমাজে প্রয়োগ করাও সহজতর হবে। এইক্ষেত্রে অবশ্যই মাতৃভাষাকে সামনে রাখতে হবে। কারণ, সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কারণে যখন কোনও জাতি তাদের নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি বিসর্জন দেয় তখন তারা তাদের নিজস্ব জাতিসত্তা হারিয়ে ফেলে। নতুন কিছু শিখতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলার চেয়ে বিপদ আর কিছুতেই হতে পারে না। জাতিসত্তার যাবতীয় শর্ত অক্ষুন্ন রেখেই বিভিন্ন ভাষা জ্ঞানের আহরণ সম্ভব। কাজটি স্বকীয়তা, নিজস্বতা আত্মপরিচিতি সংরক্ষণ করেই করতে হবে। বাংলাকে অগ্রাহ্য করার প্রবণতার ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার পিছিয়ে গেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভাষা-বৈষম্য তৈরি করছে। যে বৈষম্য ক্রমেই সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈষম্য পার্থক্যের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।

অস্বীকার করার উপায় নেই যে এখন রাজনৈতিক নেতারা সমাজকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে। দুঃখের হলেও বাস্তব যে প্রশাসন বা রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা মানুষের ‘উন্নয়ন’ নিয়ে ব্যস্ত, অথচ বাংলা ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধি ও মাতৃভাষার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধির কোন চেষ্টাই তাঁদের মধ্যে দেখা যায় না বললেই চলে। এমনকি সমাজের স্বনামধন্য শিক্ষিত শ্রেণির মানুষেরাও বাংলা ভাষার দৈন্য  ঘুচিয়ে স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও করেন না। একে একে বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলিতে ক্রমাগত ছাত্র সংখ্যা হ্রাস, এবং ছাত্রাভাবে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া, পাশাপাশি ক্রমান্বয়ে বেসরকারী ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গড়ে ওঠা এই সমস্ত ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমরা আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় কতটা উদাসীন।  ফলে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে বাংলা পড়ার ছাত্র না থাকায় বাংলার শিক্ষিকাকে বরখাস্ত করা এবং তার কারন হিসাবে বাংলা ভাষাকে নন-এক্সিসটেন্ট ল্যাঙ্গুয়েজহিসাবে উল্লেখ করার ঘটনা আদৌ কোন অবাক করা বিষয় নয়।

শিক্ষার এই তথৈবচ অবস্থার মধ্যে বাংলা ভাষা সত্যিই অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগছে। এই ভাষার ভবিষ্যৎ আদৌ আশাব্যঞ্জক নয়৷ বাংলার প্রতি দরদ কমেছে ছেলেমেয়েদের৷ ইংরেজি মাধ্যমে পড়া বাঙালি ছেলেমেয়েরা বাংলা ক্লাসিক পড়ছে না৷ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের দুর্দিন ঘনিয়ে আসছে ভেবে আমরা আতঙ্কিত হচ্ছি বটে কিন্তু সেই দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা আমাদের করতেই হবে, বাংলা ও বাঙালীর হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় হয়েছে,

স্মরণ করি মোঃ ওয়াজেদ আলির মন্তব্য “বাংলা আমাদের মাতৃভাষা এবং এই মাতৃভাষা ও সাহিত্যের যথোচিত সেবা ব্যতীত আমাদের সামাজিক ও জাতীয় উন্নতি একান্তই অসম্ভব।“

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?