বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৫

অকৃতদার



অকৃতদারঃ অ.না.. ১৪/০৪/২০১৫

স্কুল ছাড়ার পর অনেকগুলো বছর, বরং বৃহত্তর এককে বললে, বেশ কয়েক দশক কেটে গেছে । স্কুলের বন্ধুদের মধ্যে আজ কেউ ডাক্তার, কেউ মাস্টার, কেউ উকিল, কেউ করণিক, আবার কেউ বা বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে গিয়ে নিদ্রাভঙ্গ হয়ে অন্ধকার ছাপাখানার কর্মচারী । এই দীর্ঘ সময়ে অনেকের সাথে আজও বন্ধুত্ব অটুট, আবার কারো কারো সঙ্গে কালে-ভদ্রে দেখা হয়। অনেক সময় স্মৃতির অ্যালবাম ঘেঁটে অনেককে চিনে নিয়ে বন্ধুত্ব পুনঃস্থাপন করেছি । আবার অনেকেই আছে যাদের সেই সময়ের মুখগুলো স্মৃতিতে স্পষ্ট, স্কুল ছাড়ার পর আজও পর্যন্ত তাদের সঙ্গে দেখা হয়নি । ফেস বুকে তাদের নাম অনুসন্ধান করে অনেককে পেয়েও গেছি, সামান্য কয়েকজন আছে যাদের সন্ধান আজও পাইনি ।  আগে কোন বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে দেখা হলে তাদের বাড়ি যেতাম, কিংবা সে বা তারা আমাদের বাড়ি আসত, হৈ-হুল্লোড় হত । বাইরেও বেড়াতে চলে যেতাম । এখন সে সুযোগ কম ।  এখন আর তেমন বান্ধু-বান্ধবের বাড়ি যাওয়া হয় না । কারন প্রথমত, কাজের চাপে অবকাশের অভাব আর দ্বিতীয়ত, এখন আমি কিংবা বন্ধু-বান্ধব সকলেই বিবাহিত এবং প্রত্যেকেরই ছেলে-মেয়ে আছে, সংসার আছে । তাই এখন সম্পর্ক মানে পারিবারিক, ইচ্ছে করলেই যখন তখন দড়ী ছেঁড়া বলদের মত ছুটে পালানো যায় না । এখন হাড়ে হাড়ে বুঝি – মানুষ দু’রকমের, জীবিত এবং বিবাহিত ।
হারিয়ে যাওয়া স্কুলের বন্ধুদের কথা বলতে বলতে সংসারে ঢুকে পড়েছিলাম । যা হোক, সেদিন হাওড়া থেকে ফিরছি । ভিড়ে ঠাসা মিনিবাসে একটা সিটে বসে আছি । হঠাৎ একজনকে কেমন যেন চেনা চেনা মনে হ’ল । মনে হ’ল স্কুলের সেই চিন্ময় । চিন্ময়ের সঙ্গে লোকটার মুখের অদ্ভুত মিল । চিন্ময়ের সঙ্গে কোনদিন দেখা না হলেও মাঝে মাঝেই আমি চিন্ময়ের সেই ঘটনাটা স্ত্রী আর ছেলেকে শোনাই আর ওরা হেসে গড়িয়ে পরে । ক্লাস ইলেভেনে পড়ি তখন । আমাদের বাংলা শিক্ষক লক্ষ্মী বাবুর অবসর গ্রহণের দিন আসন্ন । বাংলার ম্যাডাম নমিতা ফাদিকার সকলকে লক্ষ্মী বাবুর জন্য বিদায় সম্বর্ধনা লিখে আনতে বললেন । যার লেখা সবচেয়ে ভাল হবে সেটাই বিদায় অনুষ্ঠানে পাঠ করা হবে । ম্যাডাম ভীষণ কড়া – অতএব সকলকেই লিখে আনতে হবে । বাড়ি ফিরে চলতে লাগল ‘বিদায় সম্বর্ধনা’র অনুসন্ধান – কঠিন কঠিন দাঁত ভাঙা শব্দ ব্যবহারের প্রচেষ্টা । চিন্ময়ও এ বই সে বই ঘেঁটে লেখার চেষ্টা করেছে । বাংলা বিষয়ে চিন্ময়ের ভীষণ ভীতি । ওর বাংলা ভাষা-জ্ঞান নিয়ে ম্যাডামের ক্লাসে ওকে প্রায়ই ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ শুনতে হয় । তাই ইচ্ছে না থাকলেও চিন্ময়কে বিদায় সম্বর্ধনা লিখতে হ’ল এবং জমাও দিল ঠিক সময়ে । তবে জমা দেওয়ার পরে ও বেশ গর্বের সঙ্গেই বলেছিল, দারুন লিখেছি, দাদু স্কুলের হেড মাস্টার ছিল । দাদুকে বলার সঙ্গে সঙ্গে দাদু এমন সুন্দর লিখে দিল না ! দেখে নিস ম্যাডামও অত সুন্দর লিখতে পারবেন না । ম্যাডাম খাতাগুলো সংগ্রহ করে বাড়ি নিয়ে গেলেন । বলে গেলেন পরদিন সবার লেখা ক্লাসে পড়ে শোনাবেন এবং তখনই ঠিক হবে কার লেখা বিদায় অনুষ্ঠানের দিনে মঞ্চে পড়া হবে । যথারীতি পরদিন বাংলা ক্লাসের অপেক্ষায় উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করছি । ম্যাডাম ক্লাসে এসে একে একে সবার লেখা পড়ে শোনাতে লাগলেন । ক্লাসের ফার্স্ট বয়ের লেখা পড়ার পর ম্যাডাম সন্তুষ্ট হতে পারলেন না । তখনও অনেকের লেখা পড়া বাকি । ফার্স্ট বয়ের লেখা পছন্দ না হওয়ায় সবাই এবার চিন্ময়ের লেখা শোনার অপেক্ষায় রইল । কারন সবাই জানে চিন্ময়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক দাদু ওটা লিখে দিয়েছে । কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হ’ল চিন্ময় সেদিন ক্লাসে অনুপস্থিত । অবশেষে চিন্ময়ের খাতা । ম্যাডামের মুখে হাসি । সবাই ধরেই নিল চিন্ময় ফাটাফাটি লিখেছে । ম্যাডামের হাসির আসল কারন এবার স্পষ্ট হ’ল । চিন্ময় লিখেছে, লক্ষ্মী বাবু আজীবন অকৃতদার ছিলেন । ক্লাসে হাসির ফোয়ারা । লক্ষ্মী বাবুর ছ ছ’টি ছেলে, তাদের মধ্যে একজন আবার এই স্কুলেরই করণিক । অকৃতদার শব্দটি চিন্ময়ের খুব পছন্দ হয়েছিল, তাই দাদুর কাছে শব্দটির অর্থ যাচাই না করেই নির্দ্বিধায় লিখে ফেলেছিল শব্দটা । অবশ্য পরিণাম তাকে ভোগ করতে হয়নি ক্লাসে অনুপস্থিত থাকার কারনে । পরে জেনেছিলাম লেখা জমা দেওয়ার পরে চিন্ময় অকৃতদার শব্দটির অর্থ উদ্ধার করেছিল এবং পরদিন ক্লাসে হাজির না থাকার কারন মূলত সেটিই ।
একসময় ঠিক করলাম একবার ভদ্রলোককে ডেকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করব । সেই মত আসন ছেড়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে এলাম ভদ্রলোকের কাছে । দেখলাম ভদ্রলোক শিয়ালদার টিকিট কাটলেন । মত পালটে ঠিক করলাম, আমার গন্তব্যও যখন শিয়ালদা, তখন শিয়ালদা নেমেই না হয় জিজ্ঞাসা করবো পরিচয় । শিয়ালদা নেমে ভদ্রলোকের কাছে যেতেই, একবার আমার মুখের দিকে তাকালেন ভদ্রলোক । তারপর আচমকা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “কিরে তুই অশোক না ?” ঘটনার আকস্মিকতায় প্রথমে থতমত খেয়ে গেলেও পরক্ষণেই সামলে নিয়ে চিন্ময়কে নিয়ে চললাম চা খেতে । চিন্ময়ের এক মুখ দাড়ি । অনেক কথা হ’ল । প্রায় তিন দশকের ব্যবধানে দেখা । সুতরাং জিজ্ঞাস্য অজস্র । কিন্তু সময় কম । কোথায় থাকিস, কি করিস ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে শেষ করে, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর বিনিময় করে বিদায় নেবার আগে বললাম বৌ-ছেলেমেয়েকে নিয়ে কবে আসছিস আমাদের বাড়ি ? আসার আগে একটা ফোন করিস । চিন্ময় বলল, “অবশ্যই যাব, তবে একা”। “কেন, একা কেন? পরিবার নিয়ে আয়, দারুন আনন্দ হবে”, আমি বললাম ।
চিন্ময় এবার গম্ভীর গলায় বলল, “মানে বুঝেই বলছি, আমি অকৃতদার” ।

বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৫

এইচ এইচ মুনরো রচিত ‘দি ওপেন উইন্ডো’ অবলম্বনে গল্প



সাকি (এইচ এইচ মুনরো) রচিত ‘দি ওপেন উইন্ডো’ অবলম্বনে গল্পঃ অ না ক ০৮/০৪/২০১৫
বছর পনেরর মেয়েটি বলল,“মিঃ নাটেল, পিসিমা এক্ষুনি নিচে নামবেন, এই ফাঁকে আসুন আমরা একটু গল্পসল্প করতে থাকি
ফ্রামটন নাটেল একটু অপ্রস্তুত বোধ করল । সে এখানকার কাউকেই চেনে না । না চেনারই কথা, এক্কেবারে গ্রাম্য পরিবেশ । যে ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে এমনকি তাকেও সে চেনে না । একমাত্র বোনের লেখা সেই চিঠিটাই তার ভরসা । বোন বলেছিল, সে এখানকার যাকে যাকে চেনে প্রত্যেককে সে চিঠি লিখে দিচ্ছে । বোন আরও বলেছিল, “প্রত্যেকের সঙ্গে দেখা করবি আর মিশবি, না হ’লে তোর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে”।
তা যাই হোক, কিছুক্ষণ চুপ ক’রে থাকার পর মেয়েটি বলল, “এখানকার কাউকে চেনেন-টেনেন?”
“না, না” ফ্রামটন বলল, “বছর চারেক আগে আমার বোন এখানে এসেছিল একবার । তখন ওর সঙ্গে যাদের যাদের দেখা হয়েছিল তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্যেই সে চিঠি লিখে দিয়েছে দেখা করার জন্যে । তাদের মধ্যে তোমার পিসিমার নামে চিঠিও আছে । তাই আমি ...”
“তার মানে আপনি পিসিমা সম্বন্ধে কিছুই জানেন না ?”, মেয়েটি প্রশ্ন করল ।
“একেবারে জানিনা যে তা নয়, নাম ঠিকানাটা জানি”।
“সেই দুঃখজনক ঘটনাটা মানে সেই বিয়োগান্তক ঘটনাটাতো ঘটেছিল তিন বছর আগে”, ঝাঁঝিয়ে উঠে মেয়েটি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ।
“ট্রাজেডি!”, বিস্মিত হ’ল ফ্রামটন । এমন একটা ভরপুর শান্তির পরিবেশে দুর্ঘটনা আবার কি ঘটতে পারে !
একটা খোলা জানালা, যেটা দিয়ে সোজা লনে চলে যাওয়া যায়, দেখিয়ে মেয়েটি বলল, “আপনি হয়ত জানলাটা খোলা দেখে অবাক হচ্ছেন – অক্টোবরের বিকেলে জানলা খোলা থাকাটা একটু আশ্চর্যের বৈকি”।
“এ বছর অবশ্য এই সময়টা একটু গরমই আছে”, ফ্রামটন জানাল । “কিন্ত এই জানলার সঙ্গে সেই দুঃখজনক ঘটনার কি কোন সম্পর্ক-টম্পর্ক আছে নাকি ?”
একটু ধরা গলায় মেয়েটি বলতে শুরু করল, “তিন বছর আগে এই জানলা দিয়েই আমার পিসেমশাই আর দুই কাকা শিকার করতে বেরিয়েছিল ।  কিন্তু জলা পেরোতে গিয়ে তারা সকলেই কাদায় ডুবে যায় । তাদের কাউকেই আর খুঁজে পাওয়া যায়নি” । মেয়েটি বলল, “সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার কি জানেন, পিসিমা আজও বিশ্বাস করেন যে তারা নিশ্চয় ফিরে আসবে, যে কোন দিন ফিরে আসবে । এমনকি ওদের সঙ্গী যে বাদামী রঙের স্পেনিয়াল কুকুরটি কাদায় ডুবে গিয়েছিল, সেটাও নির্ঘাত ফিরে আসবে একদিন ।  শুধু তাই নয়, পিসিমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই জানলা দিয়েই তারা ফিরে আসবে । তাই অন্ধকার না হওয়া পর্যন্ত পিসিমা প্রতিদিন জানলাটা খুলে রাখেন । পিসিমা এখনও আমাকে শোনান ওরা কিভাবে রওয়ানা দিয়েছিল, কিভাবে ঝোলানো ছিল পিসেমশাইয়ের হাতের সাদা ওয়াটারপ্রুফটা, পিসিমার ছোট ভাই,  মানে আমার কাকা, কিভাবে হেঁড়ে গলায় গান গাইছিল সব । জানেন, আমি পিসিমার এই গল্পগুলো শুনি আর আতঙ্কে কেঁপে উঠি, সত্যিই যদি কোনদিন দেখি ওরা জানলা দিয়ে ফিরে আসছে !” কথাগুলো বলতে বলতে মেয়েটি কেমন যেন শিউরে উঠল । ফ্রামটন ঘাবরে গিয়ে মেয়েটিকে কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় ঘরে প্রবেশ করলেন সেই ভদ্রমহিলা ।  
“ভেরা নিশ্চয়ই এতক্ষণ মজা করছিল?”, ভদ্রমহিলা বললেন ।
“ও চমৎকার মেয়ে”, ফ্রামটন বলল ।
“ওরা এক্ষুনি ফিরবে এবং এখান দিয়েই । তারপর কার্পেটটা কাদায় মাখামাখি করবে । বোঝেনই তো ছেলেদের যা স্বভাব !” কথাগুলো বলার পরে আবার অনর্গল বর্ণনা শুরু করলেন শীতকালে শিকারে গেলে কি ধরণের হাঁস পাওয়া যায় ইত্যাদি ইত্যাদি । ফ্রামটন প্রসঙ্গান্তরে যাওয়ার চেষ্টা করতে লাগল, কিন্তু সে দেখল অন্য কোন দিকে ভদ্রমহিলার লক্ষ্য নেই, তিনি ক্ষণে ক্ষণে খোলা জানলাটার দিকে তাকাচ্ছেন ।
“আসলে ডাক্তারের নির্দেশমতো আমার সম্পূর্ণ বিশ্রামের প্রয়োজন আর সেই সঙ্গে যে কোন ধরণের মানসিক উত্তেজনা থেকে দূরে থাকা দরকার” ভদ্রমহিলার কথার প্রবাহ একটু স্থিমিত হলে ফ্রামটন ভদ্রমহিলাকে কথাগুলো শোনাতে পারল । ফ্রামটন কিছুতেই বুঝে উঠতে পারল না একজন সম্পূর্ণ অপরিচিত ভদ্রমহিলাকে সে কি করে বোঝাবে যে যাদের কোনদিনই ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই তাদের যাত্রার খুঁটিনাটি বিবরণ কতটা অপ্রাসঙ্গিক ।
ফ্রামটনের কথাটা শুনতে পেয়ে মিসেস স্যাপলটন হাল্কাভাবে বললেন, “তাই নাকি?” হাঁই তোলা আটকাতে যেমন আওয়াজ হয়, মিসেস স্যাপলটনের কথাটা অনেকটা সে রকমই শোনাল । তারপরই আকস্মিকভাবে তাঁর চোখে মুখে ফুটে উঠল উজ্জ্বলতা । অবশ্য তা ফ্রামটনের বক্তব্যের কারনে নয় ।
মিসেস স্যাপলটন চিৎকার করে উঠলেন, “যাক বাবা, শেষ পর্যন্ত তাহলে ওরা ফিরল, একেবারে ঠিক সময়ে । যাই, ওদের জন্য চা ক’রে আনি”।
ঘটনার আকস্মিকতায় ফ্রামটন মুহূর্তে আতঙ্কিত হলেও সহানুভূতির দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকাল । আতঙ্কে ভরা দুচোখ মেলে মেয়েটি তাকিয়ে আছে সেই জানলাটার দিকেই । ফ্রামটনও এবার দৃষ্টি ফেরাল সেই দিকেই   
ফ্রামটন দেখতে পেল বিকেলের পড়ন্ত আলোর আবছায়ায় তিনটি ছায়ামূর্তি যেন এদিকেই এগিয়ে আসছে । তাদের পায়ের কাছে চলমান ছোট্ট একটা স্পেনিয়াল ।  আবছায়ায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সবার হাতে বন্দুক, তাদের মধ্যে একজনের কাঁধে একটা সাদা কোট । ওদের মধ্যে কে যেন হেঁড়ে গলায় আবার গানও ধরল ।
এবার ফ্রামটন তার ছড়িটা উঁচিয়ে ধরল । মুহূর্তে শোনা গেল বাইরে নুরি পাথর থেকে ভেসে আসা তার পালিয়ে যাওয়ার শব্দ ।
“আমরা ফিরে এসেছি”, জানলা দিয়ে ঘরে ঢুকে জানিয়ে দিল সেই ভদ্রলোক যার কাঁধে শোভা পাচ্ছিল সেই কোটটা । কিন্তু আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, “আমরা ঢোকার আগেই কেউ একজন পালিয়ে গেল বোধ হয় ! সে কে ?”
মিসেস স্যাপলটন জবাব দিলেন, “মিঃ নাটেল নামের একজন । অদ্ভুত ধরণের মানুষ, কেবল নিজের শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে কথা বলছিল । তোমরা আসছ দেখে ভূত দেখার মত পালিয়ে গেল, একবার বলে যাবার মত সৌজন্য পর্যন্ত দেখাল না”।
“বোধ হয় কুকুরটাকে দেখে ভয় পেয়েছে”, মেয়েটা মন্তব্য করল । “লোকটা বলেছিল কুকুরে তার ভীষণ ভয় । একবার নাকি একপাল কুকুর ওকে তাড়া করে নদীর ধারের এক গোরস্থানে নিয়ে তুলেছিল ।  সেখানে নতুন খোঁড়া এক কবরের ভিতরে ঢুকে তাকে নাকি সারারাত কাটাতে হয়েছিল কারন কুকুরেরা তাকে চারদিক দিয়ে রাতভর ঘিরে রেখেছিল । এমন ঘটনার সম্মুখীন হওয়া একজন মানুষের পক্ষে কুকুর দেখে ভয় পাওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক”।
চটজলদি গল্প ফাঁদা মেয়েটির একটা মস্ত গুণ ।   

শনিবার, ২১ মার্চ, ২০১৫

অবসরের রুপান্তর



             অবসরের রুপান্তরঃ অ.না`ক. ২১/০৩/২০১৫
অসিতবাবু একজন দক্ষ এবং কর্তব্যপরায়ণ ব্যাঙ্ক কর্মচারী । তাঁর স্বভাব যেমন নম্র তেমনি ভদ্র । সহকর্মীদের সঙ্গে স্বভাবতই তাঁর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় । তাছাড়াও অসিতবাবুর আর একটি সুপ্ত প্রতিভা আছে । তিনি একজন প্রতিভাবান লেখক এবং কবি । কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততায় নিয়মিত না হলেও মাঝে মাঝেই তিনি লেখেন এবং তাঁর লেখা বেশ প্রশংসিত । অসিতবাবুর মত এমন একজন সহকর্মী আর মাত্র কয়েক দিন বাদেই কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নেবেন এ খবর পাওয়া মাত্রই অফিসে প্রায় সকলের মনেই বিষণ্ণতা নেমে এসেছে । এমনকি স্বয়ং ম্যানেজারবাবু একজন আন্তরিক, অতীব ভদ্র ও সুদক্ষ সহকর্মীকে হারানোর দুশ্চিন্তায় বেশ হতাশাগ্রস্থ । অবশেষে অসিতবাবুর অবসর গ্রহণের দিন উপস্থিত হল । ব্যাঙ্কের সভাকক্ষে আয়োজন করা হয়েছে বিদায় সম্বর্ধনা । সকলের মুখ থমথমে । কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হ’ল অসিতবাবুর মুখে বিষণ্ণতার চিহ্নমাত্র নেই । বরং তাঁর মুখে স্পষ্ট দৃশ্যমান প্রশান্তির হাসি । বক্তৃতা শুরু হ’ল । চলল অসিতবাবুকে নিয়ে নানান স্মৃতিচারণা । বক্তার চোখে জল । উপবিষ্ট সহকর্মীদের ঘন ঘন রুমালে চোখ মোছা । ব্যতিক্রম একমাত্র অসিতবাবু – যাকে নিয়ে এত কান্ড । তখনও তাঁর মুখে স্মিত হাসির স্পষ্ট রেখা । এবার অসিতবাবুর বলার পালা । বক্তব্যে তিনি পরিস্কার করে দিলেন তাঁর  হতাশ না হবার গুঢ় কারণ। আসলে অবসরের পরে তিনি পুরোদমে শুরু করতে চান তাঁর লেখার কাজ – এতদিন যা তিনি করতে পারেননি । তিনি বুঝিয়ে দিলেন ষাটোর্ধ বয়স মানে কর্মধারার গতি পরিবর্তন । মূলতঃ অবসর বলে কিছু হয় না । যে কেউ ষাটের পরে তার অপূর্ণ শখকে পরিপূর্ণতা দিতে ব্যস্ত সময় কাটাতে পারেন । প্রথাগত অবসর নিয়ে অকারণ বিষণ্ণতার কোন মূল্য দিতে তিনি নারাজ । একারনেই মনে তার নিরন্তর প্রফুল্লতা । করতালিতে সভাকক্ষ ভরে উঠল । সবার চোখে জল – তবে এবার তার কারণ বিষণ্ণতা নয় – আনন্দধারা ।  

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?