অবসরের রুপান্তরঃ অ.না`ক. ২১/০৩/২০১৫
অসিতবাবু একজন দক্ষ এবং কর্তব্যপরায়ণ ব্যাঙ্ক কর্মচারী ।
তাঁর স্বভাব যেমন নম্র তেমনি ভদ্র । সহকর্মীদের সঙ্গে স্বভাবতই তাঁর সম্পর্ক
অত্যন্ত নিবিড় । তাছাড়াও অসিতবাবুর আর একটি সুপ্ত প্রতিভা আছে । তিনি একজন প্রতিভাবান
লেখক এবং কবি । কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততায় নিয়মিত না হলেও মাঝে মাঝেই তিনি লেখেন এবং
তাঁর লেখা বেশ প্রশংসিত । অসিতবাবুর মত এমন একজন সহকর্মী আর মাত্র কয়েক দিন বাদেই
কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নেবেন এ খবর পাওয়া মাত্রই অফিসে প্রায় সকলের মনেই বিষণ্ণতা
নেমে এসেছে । এমনকি স্বয়ং ম্যানেজারবাবু একজন আন্তরিক, অতীব ভদ্র ও সুদক্ষ
সহকর্মীকে হারানোর দুশ্চিন্তায় বেশ হতাশাগ্রস্থ । অবশেষে অসিতবাবুর অবসর গ্রহণের
দিন উপস্থিত হল । ব্যাঙ্কের সভাকক্ষে আয়োজন করা হয়েছে বিদায় সম্বর্ধনা । সকলের মুখ
থমথমে । কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হ’ল অসিতবাবুর মুখে বিষণ্ণতার চিহ্নমাত্র নেই ।
বরং তাঁর মুখে স্পষ্ট দৃশ্যমান প্রশান্তির হাসি । বক্তৃতা শুরু হ’ল । চলল
অসিতবাবুকে নিয়ে নানান স্মৃতিচারণা । বক্তার চোখে জল । উপবিষ্ট সহকর্মীদের ঘন ঘন
রুমালে চোখ মোছা । ব্যতিক্রম একমাত্র অসিতবাবু – যাকে নিয়ে এত কান্ড । তখনও তাঁর
মুখে স্মিত হাসির স্পষ্ট রেখা । এবার অসিতবাবুর বলার পালা । বক্তব্যে তিনি
পরিস্কার করে দিলেন তাঁর হতাশ না হবার গুঢ়
কারণ। আসলে অবসরের পরে তিনি পুরোদমে শুরু করতে চান তাঁর লেখার কাজ – এতদিন যা তিনি
করতে পারেননি । তিনি বুঝিয়ে দিলেন ষাটোর্ধ বয়স মানে কর্মধারার গতি পরিবর্তন ।
মূলতঃ অবসর বলে কিছু হয় না । যে কেউ ষাটের পরে তার অপূর্ণ শখকে পরিপূর্ণতা দিতে
ব্যস্ত সময় কাটাতে পারেন । প্রথাগত অবসর নিয়ে অকারণ বিষণ্ণতার কোন মূল্য দিতে তিনি
নারাজ । একারনেই মনে তার নিরন্তর প্রফুল্লতা । করতালিতে সভাকক্ষ ভরে উঠল । সবার
চোখে জল – তবে এবার তার কারণ বিষণ্ণতা নয় – আনন্দধারা ।