শনিবার, ২৪ জুলাই, ২০২১
বুধবার, ২১ জুলাই, ২০২১
রবিবার, ১৮ জুলাই, ২০২১
বাংলা সংবাদ চ্যানেল ও রাজনীতি
বাংলা সংবাদ চ্যানেল ও রাজনীতি - অমরনাথ কর্মকার
খুব দুঃখের হলেও সত্যি যে, পশ্চিমববঙ্গের যে কটি জনপ্রিয় বৈদ্যুতিন বাংলা খবরের চ্যানেল আছে তার প্রায় প্রতিটিতেই প্রতিদিন প্রায় সর্বক্ষণ রাজনীতির বাইরে প্রায় কোন খবরই পরিবেশিত হয় না। অবশ্য ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে বিচার করলে চ্যানেলগুলির সে প্রবণতা থাকা দোষের কিছু নয়, কারন এ রাজ্যে যা কিছু ঘটে তার পেছনে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনো না কোনো ভাবে রাজনীতি জড়িয়ে থাকে। আর এ রাজ্যের মানুষের মধ্যেও রাজনীতি নিয়ে উৎসাহের অন্ত নেই। এমনকি করোনার কারনে প্রায় সর্বক্ষণ বাড়িতে থাকা কম বয়সীদের মধ্যেও টিভিতে দেখানো রাজনৈতিক খবরের প্রতি আকৃষ্ট হবার প্রবণতা বেড়ে গেছে। বাড়ির মহিলাদের অনুরাগ অবশ্য অন্য চ্যানেলগুলিতে যেখানে বিকেল থেকে রাত অবধি সিরিয়ালি সিরিয়াল দেখানো হয়। তাঁদের মন্ত্রমুগ্ধ দৃষ্টি থাকে সেই সমস্ত সিরিয়ালের দিকে। আমি একেবারে মধ্য বা নিম্ন মধ্যবিত্ত, ইংরেজী ভালোভাবে না বোঝা পাতি বাংলাভাষী দর্শক-শ্রোতাদের কথা বলছি। সুতরাং বলাই বাহুল্য কেবল বা ডিশ টিভির দৌলতে সহজলভ্য ভারতীয় অন্যান্য ভাষা বা আন্তর্জাতিক ইংরেজী চ্যানেল থাকলেও রিমোট কন্ট্রোলের বোতামে অবশ্যই এদের বাংলা চ্যানেলে চাপ পড়ে যায়। সন্ধ্যের পরে খবরের চ্যানেলগুলিতে নিয়মিত বসে রাজনৈতিক বিতর্কের আসর। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক আর সেলিব্রিটিদের নিয়ে এই বিতর্কে বিষয়ের উপর যুক্তি, পাল্টা যুক্তিতে সমাধানহীন উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলে দীর্ঘক্ষণ, তার মধ্যে রাজনীতি পর্যবশিত হয় ব্যক্তিগত আক্রমণে, কখনো মেজাজ হারিয়ে চলে গালাগাল। ফলে এই লোভনীয় বিতর্ক দেখার আকর্ষণে আট থেকে আশি কেউই টিভির পর্দা থেকে চোখ সরান না। আম জনতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতি ঢুকে যাওয়ার পক্ষে, অতএব, এই টিভি চ্যানেলগুলির এই ধরণের অনুষ্ঠান যথেষ্ট। খবরের কাগজ খুললেও সেই একই দৃশ্য, প্রায় পুরো কাগজ জুড়েই শুধু রাজনীতি আর রাজনীতি। টিভি চ্যানেলগুলিতে আজ যা দেখানো হয় প্রায় সেই সমস্ত খবরই পরের দিন স্থান পায় খবরের কাগজে। ফলে অনেকেই খবরের কাগজ পড়ার প্রয়োজন বোধ করেন না। দু'একটি সংবাদপত্র বাদ দিলে কোন কাগজেই বাংলা সাহিত্যের আকর্ষক উৎকর্ষ প্রকাশ পায় না। ফলে টিভিতে খবর দেখা আর কাগজে খবর পড়ার মধ্যে পার্থক্যহীনতার কারনে টিভি দেখে চোখের আরাম অনুভব করাকেই অনেকেই শ্রেয় ব'লে মেনে নিয়েছেন। পাড়ার আড্ডায়, পার্কে, চায়ের দোকানেও টিভি চ্যানেলের কায়দায় যুক্তি, পাল্টা যুক্তিতে রাজনৈতিক বিতর্কের আসর সরগরম হয়ে ওঠে। এ রাজ্যের বাংলা খবরের চ্যানেলগুলিতে যে খবর সম্প্রচারিত হয় তার বেশিরভাগটাই এ রাজ্যের। মাঝে মাঝে উল্লেখযোগ্য কিছু সর্বভারতীয় খবর প্রচারিত হলেও তা অরাজনৈতিক হ'লে খুব একটা গুরুত্ব পায় না। আর আন্তর্জাতিক খবর! তা প্রায় ডুমুরের ফুল। দুনিয়া কাঁপানো কোন খবর হ'লে তার সম্প্রচার কয়েক পলকেই শেষ হয়ে যায়। এই ধরণের খবর দেখার জন্য টিভির পর্দার নীচের অংশের চলমান স্ক্রোলে লক্ষ্য রাখতে হয়।
এখন প্রশ্ন একটাই, রাজনীতির বাইরে কি কোন খবর হয় না? সেগুলির জন্যও তো একটু সময় দেওয়া যায়। বাংলাদেশের অনেক ট্যিভি চ্যানেলে প্রতিদিন আন্তর্জাতিক খবর দেখানো হয় অনেকটা সময় নিয়ে। সেখানে খেলা থেকে শুরু ক'রে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খবর দেখানো হয়ে থাকে অনেকটা সময় নিয়ে। প্রশ্ন হতে পারে আন্তর্জাতিক খবর দেখার জন্য তো অনেক বিদেশী চ্যানেল রয়েছে। আমি আগেই বলেছি, আমি সেই সমস্ত নিম্ন বা মধ্যবিত্ত বাংলাভাষী মানুষদের কথা বলছি যাঁরা সবচে' ভালো বোঝেন বাংলাভাষা।
বাংলা খবরের চ্যানেলগুলির বোধ হয় রাজিনীতি ছাড়াও রাজনীতির বাইরের এবং দেশী-বিদেশী বিভিন্ন খবর একটু বেশী সময় দিয়ে সম্প্রচার করা উচিৎ। খবরের চ্যানেলগুলি যদি মানুষের মনকে সর্বক্ষণের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্য রাজনীতির বাইরের এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভিন্ন স্বাদের খবর প্রতিদিন নিয়মিত এবং একটু দীর্ঘ সময় ধ'রে পরিবেশন করে তাহলে হয়ত সমাজে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা যথাযোগ্যভাবে পালন করা হবে। বিশেষ ক'রে কম বয়সীদের জন্য তা হবে যথেষ্ট উপকারী। তবে বাংলার জনপ্রিয় বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমগুলির ভূমিকার পরিবর্তন না হ’লে, আমার বিশ্বাস, বাংলার মানুষের কাছে একদিন রাজনীতিই হয়ে উঠবে প্রধান বিনোদন।
বুধবার, ১৪ জুলাই, ২০২১
বুধবার, ৭ জুলাই, ২০২১
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
মুখ চাপা সত্য
মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু নাকি সত্যের চির সমাধি? নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?
-
এক লাইনের কাব্যঃ অ.না.ক. ২১/০৩/২০১৭ এক লাইনেও কাব্য হয় দু'লাইনে ছন্দময় ।