সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০২২

ভাইরাল

 

ভাইরাল

                                                                                  অমরনাথ কর্মকার ১১/০৪/২০২২

আজকাল কিছু শব্দ ইন্টারনেট বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে বিশ্বময় বিপুল জনপ্রিয় যাদের অন্যতম ‘ভাইরাল’ শব্দটি।  শহর থেকে শুরু রে প্রত্যন্ত গ্রাম বাংলায় আধুনিক প্রজন্মের সবাইভাইরালশব্দের সঙ্গে পরিচিত।  কিছুদিন আগে একটি সিংহলি গানমানিকে মাগে হিথে..’ ভাইরাল হয়েছিল। অতি সম্প্রতি ভূবন বাদ্যকরেরকাঁচা বাদামভাইরাল হয়েছে। কিন্তু বিষ্ময়ের ব্যাপার ইংরেজি অভিধান অনুযায়ীভাইরালশব্দটি যে অর্থে ব্যবহৃত হওয়ার কথা এক্ষেত্রে তার সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। মূলত শাব্দিক অর্থের পরিবর্তে এখানে ভাবার্থই প্রাধান্য পেয়েছে। বিশেষ্যভাইরাস-এর গুণবাচক বিশেষণ হিসাবেভাইরালশব্দটির জনপ্রিয়তা। আবার আভিধানিক অর্থের ভিত্তিতে, ভাইরাস যেহেতু অতি দ্রুত বিস্তার লাভ করে তাই অতি দ্রুত বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে কোন বিষয় অতি দ্রুত ছড়িয়ে পড়া অর্থে ভাইরাল শব্দের ব্যবহার আভিধানিক স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১৭ সালে গুগল, ইউটিউব, ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বা খোঁজ করা শব্দগুলোর মধ্যে ভাইরাল শব্দটি অন্যতম।

 

তবে সামাজিক মাধ্যমে এইভাইরালশব্দটির ব্যাপক ব্যবহারের একটা ইতিহাস আছে।  ২০০০ সালের ৩১ জুলাই মার্কিন লেখক সেথ গোডিনফাস্ট কোম্পানি ডট কমনামক ওয়েব সাইটে  আনলিশিং দ্য আইডিয়া ভাইরাসশিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন যেখানে একটি লাইন ছিল Have the Idea behind your online experience go viral… সেই থেকেইভাইরালশব্দটির ভাইরাল হওয়ার সূত্রপাত। আর এখন তো গ্রামবাংলার মানুষও রানু মন্ডল বা ভূবন বাদ্যকরেরভাইরাল’ হওয়ার ব্যাপারে  ওয়াকিবহাল। সেইসঙ্গে নেটদুনিয়ায় সর্বক্ষণ চলছে রাতারাতি ভাইরাল হওয়ার ইদুরদৌড়। বিষয়ের ভালো-মন্দ এক্ষেত্রে হয়ত মূল বিচার্য নয়, কত বেশি সংখ্যক মানুষ তার দর্শক সেটাই বিচার্য এতে কেউ হয়ত রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে উঠছেন আবার এইভাইরালহওয়ার কারনেই কেউ বা হয়ে উঠছেন মানুষের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের পাত্র।  ভূবন বাদ্যকারেরকাঁচা বাদামভাইরাল হয়ে তিনি বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন রাতারাতি, আবার একদা ভাইরাল হওয়া প্রশংসিত গায়িকা রানু মন্ডল পুনরায় ভাইরাল হয়েছেন ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের পাত্রী হিসাবে। সুতরাং এই ভাইরালিজমের ভালো, মন্দ দুটো দিকই আছে। 

 

ভাইরাল-এর মত আরোও অনেক শব্দ সামাজিক মাধ্যমের বদান্যতায় বিশ্বময় জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বলা যেতে পারে ইন্টারনেট তথা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের কারনে ভাষাবিজ্ঞানের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। অনেক দেশে নিয়ে রীতিমত গবেষণা শুরু হয়েছে। ইউরোপের  ভাষাবিজ্ঞানী গবেষক ডেভিড ক্রিস্টালইনটারনেট লিঙ্গুইস্টিক্স(আন্তর্জালিক ভাষাবিজ্ঞান) নামে নতুন এক বিষয়ের অবতারণা করেছেন। তিনি মনে করেন, প্রথাগত শিক্ষার  শৃঙ্খলায় একটি নতুন  বিষয়ের সংযোজন করা খুব সহজ নয়, কিন্তু  ইন্টারনেটের আবির্ভাব ভাষাকে এতটাই প্রভাবিত করেছে যে ইন্টারনেটের ভাষা নিয়ে গবেষণা একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই সমস্ত ভাষার স্থায়ীত্ব সাময়িক, খুব কম সময়ের ব্যবধানে এই ভাষা পরিবর্তিত হচ্ছে। সেই কারনেই সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে বাংলাভাষীদের মধ্যেভাইরালশব্দটিও জনপ্রিয় হয়েছে এবং এই শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ যদি হয়েও থাকে, তবুওভাইরালব্যবহারেই বাঙালীরা বেশি স্বছন্দ।    

 

তবে ইন্টারনেট আর সামাজিক মাধ্যম সৃষ্টির  আগে কি কোন বিষয়ভাইরাল না ? হ্যাঁ , তবে তা আজকের মতভাইরালনামে হয়ত পরিচিত ছিল না। কিন্ত কিছু বিষয় বা মানুষ তখনও আচমকা  ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠত এবং বিশ্বময় ঝড়ের গতিতে তা ছড়িয়েও পড়ত, তবে আজকের মত বৈদ্যুতিন গতিতে অবশ্যই নয়। প্রসঙ্গে অ্যালাবার্ট আইনস্টাইনের জিভ বের করা মজার ছবিটির উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে ১৮৭৯ সালের মার্চ প্রচারবিমুখ আইনস্টাইনের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আর্থার স্যাসের কামেরায় বন্দি বিরক্ত আইনস্টাইনের জিভ বের করা ছবি বিশ্বময় যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল তা আজভাইরালহওয়া অনেক কিছুকেই হার মানাবে। তবে আজকের দিনেভাইরালহওয়া অনেক কিছুই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুদিন বাদে হারিয়ে যায়। আইস্টাইনের সেই ছবি কিন্তু আজও বিশ্বব্যাপী সমান জনপ্রিয়।

শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০২২

রাজনীতিকদের আচরণ ও তার সামাজিক প্রভাব

 

রাজনীতিকদের আচরণ ও তার সামাজিক প্রভাব

-        অমরনাথ কর্মকার

জনগণের দেওয়া ক্ষমতাবলে রাজনীতিকেরাই মূলত একটি দেশের বা রাজ্যের নীতিনির্ধারক দেশ বা রাজ্য পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত। একজন দক্ষ নাবিকের মত সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে দেশ বা রাজ্য নামক জাহাজকে তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের (উন্নয়নের) দিকে নিয়ে যান রাজনীতিকরা। রাজনীতি এক ধরণের সুচারু শিল্প যার সাহায্যে জনগণ অনুগামীদের কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রাজনীতিকেরা সৎ বিচক্ষণ হলে সে দেশ বা রাজ্যের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আর এর বিপরীত কিছু ঘটলে সেই দেশ বা রাজ্যকে প্রতিনিয়ত ধুঁকে ধুঁকে চলতে হয় বিগত বেশ কয়েক দশক রে আমাদের দেশে সার্বিক ভাবে যে অসুস্থ রাজনীতির চর্চা চলে আসছে, তা বদলানোর প্রয়াসে সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মহল নানাভাবে দাবি তুলে আসছে। বাস্তবে রাজনীতির এই অসুস্থতা নিরসনের কোন বাস্তব পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি, বা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়নি। রাজনীতির একটা নিজস্ব ভাষা-শৈলি আছে  যা প্রথাগত প্রাত্যহিক জীবনে ব্যবহৃত ভাষার চেয়ে ভিন্ন কিন্তু তা কখনোই অশালীন তে পারে না। বিগত বেশ কয়েক বছর রাজনীতিকদের ভাষার শালীনতা হারানো শুরু হইয়েছেশুরু হয়েছে ব্যক্তিগত আক্রমণের প্রবণতা। অশালীন বা কুভাষা প্রয়োগের মাত্রা বাড়তে বাড়তে তা ক্রমশ অশ্রাব্য তে শুরু করেছে যা ভারতীয় রাজনীতির গৌরবকে প্রতিনিয়ত ম্লান রে চলেছে। বিশেষ রে শাসক-বিরোধীর মধ্যে যে অশালীন ভাষার প্রয়োগ শুরু হয়েছে তা রীতিমত ভাষাসন্ত্রাস। বিশেষত টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেল ইন্টারনেট নির্ভর বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে অপ্রীতিকর রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমাদের সামাজিক ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করছে।  বর্তমানে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের অধিকাংশ রাজনীতিতে জড়িত হওয়ার প্রসঙ্গ উঠলেই গা এড়িয়ে চলে। এর দায়ভার আমাদের প্রবীণ রাজনীতিকদের নিতে হবে। কারণ, তাঁদের অধিকাংশই এমন ভালো কোনো উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে পারেননি, যা দেখে তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ হবে। কিন্তু এভাবে আর কত দিন?

সৎ যোগ্য তরুন সম্প্রদায় যদি রাজনীতির মূলধারায় যুক্ত হতে না পারেন, তবে এই রুগ্ণ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীন। ক্ষেত্রে দু-একজন রাজনীতিক, যাঁরা সুস্থ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাঁরা রাজনীতির মঞ্চে সঠিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে উৎসাহী করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেন। পাশাপাশি বিভিন্ন গণমাধ্যমেরও যথেষ্ট শক্তিশালী ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। আমরা চাই স্কুলের বা পরীক্ষার খাতায়জীবনের লক্ষ্যরচনা লিখতে গিয়ে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার পাশাপাশি দক্ষ রাজনীতিবিদ  হওয়ার আন্তরিক ইচ্ছের কথাও স্বতস্ফূর্তভাবে লিখতে পারে অনেক ভবিষ্যৎ প্র্রজন্ম।

রাজনৈতিক দলগুলি ভারতীয় গণতন্ত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সুতরাং তাঁদের গণতান্ত্রিক ভাবে কাজ করার সঙ্গে দেশ বা রাজ্যের গণতন্ত্রের স্বাস্থ্য প্রাণবন্ততা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।

এটা অনস্বীকার্য যে, আজকের সমাজ রাজনীতি শাসিত। রাজনীতিকরা দেশকে যেমন চালাতে এবং গড়তে চান, দেশের সমাজ ব্যবস্থা তেমনি চলে এবং গড়ে ওঠে।  একসময়ে সমাজ গঠনে রাজনীতি-নিরপেক্ষ আদর্শনিষ্ঠ ধর্মগুরু, সমাজপতি শিক্ষকদের ভূমিকা ছিল মুখ্য। সে দিন আজ অতীত,  এখন মূলত রাজনীতিকদের হাতেই সমাজ গঠনের চাবিকাঠি। প্রসাশন তো বটেই, আজ শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম থেকে শুরু করে অর্থনীতি সবই রাজনীতিকরা নিয়ন্ত্রণ করেন। বর্তমানকালে প্রায় সব দেশের সমাজ গঠনে এবং মানুষের সামাজিক আচরণে রাজনীতিকদের আচরণের এবং ভাবাদর্শের ভালোমন্দের প্রভাব অপরিসীম। এক কথায় বলতে গেলে, আজকের দিনে দেশের সমাজ গঠনে রাজনীতিকরাই প্রধান নির্দেশক শিক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ন। এরই জেরে দেশে রাজনীতিকদের দায়িত্বও বেড়ে গেছে শতগুণ। কিন্তু সে দায়িত্ব তারা সততার সাথে পালন করতে পারছেন কি ? রাজনীতিকদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচার আচরণ প্রতিদিন সংবাদ সামাজিক মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ফলাও রে প্রচারিত হচ্ছে যা ছোট বড় নির্বিশেষে সবার কাছেই কৌতুহলের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো টিভি সিরিয়ালের চেয়েও বেশি আকর্ষণের বিষয় হয়ে উঠেছে।

সমাজের নিয়ন্ত্রক রাজনীতিকরা নিজেরাই যদি দায়িত্বশীল আচরণ করতে এবং কথাবার্তা বলতে অক্ষম হন, তাহলে  দেশের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ কথাবার্তা আশা নিরর্থক।  রাজনীতিকরা যদি সুশিক্ষায় শিক্ষিত না হন তবে দেশের মানুষ সুশিক্ষিত হবে, তা প্রত্যাশা করা বৃথা।  রাজনীতিকরা যদি শান্তিপ্রিয় এবং পরমত বা পর-ধর্মসহিষ্ণু না হন, তা লে সমাজে হিংসা, ধর্মীয় সংঘাত লেগেই থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলির আদর্শগত বিভিন্নতা থাকতেই পারে, কিন্তু শুধু ক্ষমতা দখলের লোভে দুর্নীতি, হিংসার আশ্রয় নিলে সমাজ তার দ্বারা প্রভাবিত হতে বাধ্য। দলীয় স্বার্থের সংঘাতে পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস প্রকট হচ্ছে যা সমাজকে ক্রমশ অসুস্থ অস্থির রে তুলছে। সবকিছুই যেহেতু রাজনীতিকেন্দ্রিক, তাই সুস্থ সমাজ গড়ার দায়ভার  রাজনীতিকদের নিতেই হবে।

 


মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?