শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০২০

বদন নাপিত


বদন নাপিত
-  অমরনাথ কর্মকার ২৫/০৭/২০২০

ছোটবেলায় ফিরে যেতে অনেকেরই বোধহয় ইচ্ছে হয়। কিন্তু তা কল্পনায়। আমি খেয়াল করেছি কিছু পরিবেশ, কোন গন্ধ আচমকা শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যায় নিজেকে। কয়েকদিন আগের একটা ঘটনায় কিছুক্ষণের জন্য শৈশব ফিরে পেয়েছিলাম। শৈশব পুনরুদ্ধারের এই ঘটনা না লিখে শান্তি পাচ্ছিলাম না কিছুতেই। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে তখন মাস তিনেকের লকডাউন চলছিল। সংক্রমণের ভয়ে বাড়ির বাইরে পা রাখাটা ছিল বিপদের
স্ত্রীর অপটু হাতে ইতিমধ্যে একবার আমার চুল কাটানো হয়ে গেছে। কিন্তু নাপিতের কাছে চুল না কাটালে কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিলান না। আবার সেলুনে গিয়ে চুল কাটানো, তাতেও সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি। অতএব, অধিক অর্থের বিনিময়ে নাপিতকে ডাকা হ'ল বাড়িতে। চিরুনি, কাঁচি সব রীতিমত জীবানুমুক্ত ক'রে, হাতে দস্তানা প'ড়ে, মুখে মাস্ক লাগিয়ে নাপিত প্রস্তুত। তারপর ছোট্ট একটা টুলে ব'সে পলাম।   গায়ে জড়িয়ে দিল আমাদেরই একটা কাপড়। নিজেকে কেমন যেন তখন শিশু শিশু মনে হচ্ছিল। তারপর কাঁচির অবিশ্রান্ত ক্যাঁচ ক্যাঁচ আওয়াজ আর ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা নাপিতের গায়ের ঘামের গন্ধ আমাকে সোজা নিয়ে চলল শৈশবে - আমি স্পষ্ট  দেখতে পেলাম বাবা জো ক'রে আমাকে বসিয়ে দিয়েছেন বদন নাপিতের কাছে, আমি চোখ নাক কুঁচকে, চোখে জল নিয়ে প্রহর গুনছি কখন বদন নাপিত তার ক্ষুর বের ক'রে কাজ শেষ করবেন। বাবা লাঠি হাতে ঠাঁই ব'সে আছেন আমার বিপজ্জনক অঙ্গসঞ্চালন আর কান্না থামাতে। ছোটবেলায় আমাদের চুল কাটতেন বদন কাকু।
বাবা যখন দেখতেন আমাদের চুল বড় হয়েছে, খবর দিতেন বদন নাপিতকে। হাঁটু পর্যন্ত সাদা ধুতি আর সাদা ফতুয়া পরা কালো মিশমিশে মানুষটি যখন একটা কাঠের বাক্স হাতে বাড়িতে ঢুকতেন তখন বাড়ির ছোটদের মধ্যে রীতিমত ত্রাহি ত্রাহি পড়ে যেত। মায়ের কাছে গিয়ে চুল না কাটানোর বাহানা জুড়েও কোন লাভ হ'ত না কারন রাশভারি বাবার রক্তচক্ষুর কাছে তখন সবাই ভিজে বেড়াল বদনকাকু প্রথমেই গায়ে একটা সাদা কাপড় জড়িয়ে গলার কাছে যখন গিঁট দিতেন তখন দম বন্ধ হয়ে আসত। তারপর তাঁর নির্দেশনায় আর বাবার কড়া পর্যবেক্ষণে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় মাথা স্থির রাখতে হ'ত। চুল কাটার সময় চিরুনি আর কাঁচির দ্বৈত সঞ্চালনে সুড়সুড়ি অনুভব করলেও শরীর নাড়ানোর উপায় না থাকায় দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বুঁজে অন্য বিষয় ভাবার চেষ্টা করতাম। আর ক্ষুর চালানোর সময় ঈশ্বরকে ডাকতাম। বদন কাকুকে কখনোও রাস্তায় দেখলে অন্য পথে পালাতাম। বদন কাকুর গা থেকে ঘাম আর বিড়ির ধোঁয়ার একটা অদ্ভুত মিশ্রিত গন্ধ বেরোত।
এরকম চলতে চলতে একদিন বাবা আমাকে চুল কাটাতে একটা সেলুনে নিয়ে গেলেন। কারন হিসাবে জানতে পারলাম বদন কাকু রেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সেই ছোট্ট বয়সে বদন কাকুর মৃত্যুর খরটা শুনে, সত্যি বলতে কি, আনন্দই পেয়েছিলাম। আজ এই বয়সে বাড়িতে চুল কাটাতে ব'সে নাপিতের গায়ের ঘামের গন্ধটা অবিকল বদন কাকুর মত মনে হ'ল। ঠিক সেই ছোটবেলার স্মৃতিগুলো বাস্তব হয়ে ফিরে এল। তফাত এই, আমার মনে সেই ভীতি নেই, কড়া পর্যবেক্ষণে বাবা সামনে ব'সে নেই (এমনকি ইহজগতেও নেই) আর যিনি আমার চুল কাটছেন তিনি বাদল কাকু নন। ছোটবেলায় যাঁদের অনুপস্থিতিতে নিজেকে স্বাধীন, নির্ভয় মনে হ, আজ সেই অনুপস্থিতিগুলো মনকে ভারাক্রান্ত করে। যেমন দুঃখ হয় ফেলে আসা শৈশবের জন্য।

মঙ্গলবার, ২১ জুলাই, ২০২০

ছন্দে ফেরা

ছন্দে ফেরাঃ অ.না.ক. ২১/০৭/২০২০

এ আতঙ্কের দিন কবে শেষ হবে ?
জীবন আবার ছন্দে ফিরবে কবে ?
মৃত্যুমিছিল, চারদিকে শুধু হতাশার কালো ধোঁয়া
চোখে জল তবু প্রিয়জনকে যাবে না ছোঁয়া।
প্রতি পদে ভয়, তবুও সবাই বাঁচার তাগিদে ছুটে যায়
সংক্রমণের ভয়, তারও চেয়ে ভয় কখন কাজ হারায়।
কত আশা নিয়ে বাঁচে লোকে -
কত দিন কাটে সুখে কিংবা শোকে।
লড়াই শেষে কঠিন দিন হবে মসৃন আছে বিশ্বাস
মুখোশ খুলে প্রাণ ভরে আবার নেব  শ্বাস।
আগামী প্রজন্ম নিশ্চয়ই এই ইতিহাস হবে অবহিত
জানবে কাদের অবদানে সভ্যতা হয়নি সমাহিত।

সোমবার, ১৩ জুলাই, ২০২০

অভিযোজনে বিবর্তন

অভিযোজনে বিবর্তনঃ অমরনাথ কর্মকার ১৪/০৭/২০২০

বিবর্তন চলছেই।
বন্য সভ্যতা থেকে আজকের সব-পাওয়া জীবন,
ঘাস খাওয়া জিরাফের মগডালে মুখ দেওয়া,
দেখেশুনে মনে হয় এভাবেই চ'লে যাবে দিন।
আসলে অভিযোজন সাময়িক,
সময়ের স্রোতে ভেসে যায় ঠিক।
বিবর্তন চলতেই থাকে
মুখ-খোলা সুদর্শন সভ্যতার মুখে
মুখ ঢাকার আকষ্মিক বিবর্তন আজ।
এই অভিযোজন দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলে কপালে জানি,
তবু আগামী বিবর্তন আশা জাগায়।
যোগ্যতমের উতবর্তনে
সভ্যতা বেঁচে থাকবে নির্ঘাত।

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?