বৃহস্পতিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৯

সল্টলেকের ডায়েরি

সল্টলেকের ডায়েরিঃ অ.না.ক. ১০/০১/২০১৯

এই মুহুর্তে ব'সে আছি সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের ফুটপাতে পুরোনো একটা বাংলা খবরের কাগজ পেতে। ছেলে একটা সর্বভারতীয় প্রবেশিকা  পরীক্ষায় বসছে তাই সঙ্গে আসতে হয়েছে। যখন লিখছি তখন দুপুর প্রায় দুটো। চারপাশে বিশাল বিশাল আকাশচুম্বি  তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তর। আমার আশপাশে ফুটপাতে সারি সারি খাবারের দোকান। বুকে পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরোচ্ছে সুবেশ তরুন তরুনী।  তারুন্য পেরিয়ে প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছানো মহিলাদের মধ্যেও তারুন্য বজায় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা। ওই বয়সের পুরুষদের দেখা, কেন জানিনা, খুব একটা মিলল না। আমি যেখানে ব'সে আছি তার সামনের দোকানে তথ্যপ্রযুক্তি দপ্তরের আধুনিক পোষাক-আশাকে সজ্জিত তরুন-তরুনীরা দাঁড়িয়ে চা-সিগারেট খেতে খেতে কথাবার্তা বলছেন। নারী পুরুষ নির্বিশেষে প্রায় সকলের মুখেই সিগারেট। বেশিরভাগ মহিলাকেই দেখলাম সিগারেটের ধোঁয়া আদৌ গিলছেন না। অর্থাৎ ধুমপায়িদের মত নেশাগ্রস্থ নন, অথচ সিগারেট ধরিয়েছেন। হয়ত এটাই তাঁদের মেলামেশার রীতি। অনেককে দেখলাম আমার দিকে তাকাচ্ছেন। সেই সময় আমার চোখ চলে যাচ্ছিল আমার আসন হিসাবে ব্যবহৃত বাংলা খবরের কাগজের দিকে। কারন আমার সন্দেহ হচ্ছিল হয়ত তাঁরা আমার বাংলা কাগজ দেখে আশ্চর্য হয়েছেন। কারন এতক্ষন তাঁদের কথাবার্তায় বাংলার লেশমাত্র কানে আসেনি। প্রায় পুরো কথাবার্তা ছিল ইংরেজিতে, মাঝে মাঝে দু'একটি হিন্দি শব্দ। আশপাশের উঁচু উঁচু আধুনিক অট্টালিকা, সল্টলেকের পরিচ্ছন্ন রাস্তা, সুন্দর সুন্দর গাড়ী আর তার মাঝে অনর্গল ইংরেজী বাক্যালাপ শুনে ভুলেই গেছিলাম যে আমি পশ্চিমবঙ্গে আছি, যতই বঙ্গভঙ্গ হোক, যার সঙ্গে 'বঙ্গ' জড়িয়ে , যে রাজ্যের সরকারী ভাষা বাংলা। মনে হচ্ছিল আমি অন্য কোন দেশে এসে হাজির হয়েছি যেখানে বাঙালী হিসাবে আমি বেমানান, তাই অন্যদের আমার প্রতি এই বিষ্ময়জনিত দৃষ্টিপাত। পরে অবশ্য বুঝলাম আমার দিকে তাঁদের দৃষ্টিপাত আসলে আমাকে ফুটপাতে ব'সে থাকতে দেখে। পাতি বাংলা মাধ্যমে পড়া একজন অতি সাধারণ মানুষ হলেও ইংরেজী 'বাঙালী ইংরেজদের' মত বলতে  না পারলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না। এতক্ষন কথোপকথন শুনছিলাম অবাক হয়ে। ইংরেজী শুনতে খারাপ লাগছিল না। কিন্তু খুব খারাপ লাগছিল মাঝে মাঝে। কারন দু'একজন তরুণীকে দেখলাম নির্দ্বিধায় কথার মাঝে গালাগালি দিয়ে যাচ্ছে ঠিক যেমন অনেকে কথায় কথায় 'ব'যুক্ত শব্দের খিস্তি ব্যবহার করে। আমাকে ইংরেজীতে নিরক্ষর পাতি বাঙালি ভেবেই হয়ত খিস্তি দিতে দ্বিধা বোধ করেনি। ঘটনাটা আমার কাছে বেশ উপভোগ্যই ছিল এতক্ষন। বাংলা ভাষার এই পরিণতি নিয়ে সারাদিন বাজার গরম। হায় হায় না ক'রে নিজেরা বাংলাকে বেশি বেশি ক'রে ব্যবহার করার চেষ্টা করলেই যথেষ্ট। যেমন এই লেখাতে আমি যতটা সম্ভব বাংলা শব্দ ব্যবহারের চেষ্টা করছি। মায়ের ভাষাকে আসলে ভোলা যায় না। এতক্ষণ উপভোগ করছিলাম। কিন্তু আকষ্মিক একটা ঘটনা এতক্ষণের উপভোগ্যতায় জল ঢেলে দিল। এক তরুণী তখন অনর্গল ইংরেজীর ফোয়ারা সহকারে ধুমপানে মশগুল। একটা ফোন এল। কানে দিয়েই তিনি প্রায় কাঁদো কাঁদো স্বরে পরিষ্কার ঢাকাইয়া বাংলায় কথোপকথন শুরু করলেন। বুঝতে পারলাম বাড়িতে হঠাৎই কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এটাও বুঝতে বাঁকি রইল না যে বাংলা মরেনি, মরেও না, শুধু মোড়ক পালটায়।

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?