শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৭

রক্তদান

বিগত বেশ কিছুদিন ধ'রে প্রায় প্রতিদিনই রক্তদান করে চলেছি। সেই সঙ্গে চলছে টেনিস খেলা। এমনকি মাঝরাতে উঠেও টেনিস খেলতে হচ্ছে। রক্ত নেওয়ার জন্য ডাক্তাররা আসছেন স্বেচ্ছায়। তারা কানের কাছে ক্রমাগত ব'লে যাচ্ছেন,"তোমরা আমাকে রক্ত দাও"। কিন্তু একবারও বলছেন না,"আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব"। এভাবে চলতে থাকলে ব্লাডব্যাঙ্কগুলোতে রক্ত উপচে পড়বে কি না জানা নেই তবে আমি যে ক্রমশ রক্তশূন্যতার দিকে এগোচ্ছি সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত। আর যখন তখন ব্যাট হাতে টেনিস প্র‍্যাক্টিস করতে করতে লিয়েন্ডার পেজ কখনোই হ'তে পারব না, কারন এই টেনিসে বলের বদলে ব্যবহৃত হয় অতিক্ষুদ্র পতঙ্গ। তবে রক্তসংগ্রহকারী ডাক্তাররা আমাদের স্বাধীনতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি না দিলেও স্বাধীনতা আমরা পাই - চুলকাবার স্বাধীনতা - শরীরের প্রায় সব আবরণ খুলে ফেলে সর্বাঙ্গে চুলকাবার অবাধ স্বাধীনতা।
হ্যামিলটন সাহেবের গোসাবা
পশ্চিমবঙ্গে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হিসাবে দঃ২৪ পরগণার গোসাবার নাম প্রায় সকলেরই জানা । প্রকৃতির মোহময়ী সুন্দরবনের জল-জঙ্গল, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, কুমীর দেখার টানে আগত প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের অনেকেই অনুসন্ধিৎসু থাকেন পর্যটনকেন্দ্রের নানাবিধ ঐতিহাসিক গুরত্ব অবলোকন করতে । এই হিসেবে শুধু সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হিসাবেই নয়, গোসাবার একটা ব্যতিক্রমী ঐতিহাসিক ঐতিহ্যও রয়েছে যা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের বিষয় । কিন্তু দুঃখের হ’লেও সত্যি যে, গোসাবায় বিদ্যাধরী নদীর তীরের এই ঐতিহাসিক নিদর্শন সার্বিক অবহেলায় ক্রমশ গুরুত্ব হারাচ্ছে ।
১৯০৩ সালে স্যার ড্যানিয়েল হ্যামিলটন সাহেব সুন্দরবনের গোসাবায় এসেছিলেন সেখানকার মানুষের দুঃখ- দুর্দশা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার জন্য । ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে জল-জঙ্গল ঘেরা গোসাবা, রাঙ্গাবেলিয়া ও সাতজেলিয়া দ্বীপ (১২,২৫৭ বিঘা জমি) ইজারা নিয়ে মানব কল্যাণে সমবায় আন্দোলন শুরু করেছিলেন সম্রাট আশোকের আদর্শে অনুপ্রাণিত স্কটল্যান্ডের এই মহামতি । এই মানব কল্যাণের স্বীকৃতি হিসাবেই ইংল্যান্ডের রাজা ৭ম এডওয়ার্ড ১৯০৬ সালে তাঁকে ‘নাইট’ উপাধি দেন এবং তিনি পরিচিত হন স্যার ড্যানিয়েল হ্যামিলটন হিসাবে । প্রজাদের আর্থিক মানোন্নয়নের প্রয়োজনে তিনি এই অঞ্চলে এক টাকার কাগজের নোটের প্রচলন শুরু করেন (৮ ফেব্রুঃ ১৯৩৬) । নিজের পরিবারের সদস্য ও অতিথিদের থাকার জন্য গোসাবায় এক কিলোমিটার ব্যবধানে দুটি বাসস্থান নির্মিত হয় যার একটি ‘বেকন বাংলো’ এবং অন্যটি ‘হ্যামিলটন বাংলো’ নামে পরিচিত। মায়ানমার থেকে আনা মূলবান সেগুন কাঠের তৈরি দর্শনীয় এই বাংলো মূল্যবান ঐতিহাসিক নিদর্শন হলেও প্রশাসনিক অবহেলায় পর্যটকদের ততটা দৃষ্টি আকর্ষণ করে না । গোসাবা একদা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদধূলিধন্য হয়েছিল । ২৯ ডিসেম্বর, ১৯৩২ সালে হ্যামিলটন সাহেবের আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ গোসাবায় উপস্থিত হয়েছিলেন । এই হিসেবে এক ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান হিসাবে গোসাবা পর্যটকদের কাছে অনেক আকর্ষণীয় হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি । বেকন বাংলোর সামনে প্রতিষ্ঠিত রবীন্দ্রনাথের মূর্তি দাঁড়িয়ে আছে অযত্নে । বাংলোর দেওয়ালে রং-এর প্রলেপ নেই । ক্রমশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মহার্ঘ সেগুন কাঠ । ‘হ্যামিলটন বাংলো’য় হ্যামিলটন সাহেবের স্মৃতিবিজড়িত জিনিসপত্র এবং তাঁর আবক্ষ মূর্তি সবই অবহেলায় ধ্বংসের মুখে ।বাংলো রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে গঠিত ট্রাষ্টি বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু ক’রে জেলা প্রশাসন এমনকি রাজ্য সরকার সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গোসাবা শুধু সুন্দরবন নয়, ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান হিসাবেও পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করতে পারে ।

মুখ চাপা সত্য

 মুখ চাপা সত্য শেষ দিয়ে সত্যের শুরু  নাকি সত্যের চির সমাধি?  নাকি মুখ চাপা সত্যের গোঙানি স্পষ্ট বাক্যে শোনা যাবে একদিন?